সড়ক দুর্ঘটনার নানা কারণ হয়তো আমরা জানি। তবে আনাস, সিয়াম ও সুশান্ত কারণগুলো জেনে এগিয়ে এসেছেন সড়ক দুর্ঘটনা রোধে। প্রতিরোধের পথ বাতলে দিতে ছোট্ট একটি যন্ত্রও উদ্ভাবন করেছেন তাঁরা। তাঁদের উদ্ভাবিত যন্ত্রটি চালকের সহকারী ও পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করবে। ‘অ্যাডভান্স ড্রাইভার অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড মনিটরিং সিস্টেম’ নামের যন্ত্রটিকে তাঁরা সংক্ষেপে বলছেন ‘অ্যাডামস কিট’। মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে যন্ত্রটি নানা ধরনের নির্দেশনা দেবে গাড়ির চালককে।
গতকাল ২২ জানুয়ারি প্রথম আলো কার্যালয়ে কথা হয় এই তরুণদের সঙ্গে। অ্যাডামস কিটের বিষয়টি খোলাসা করলেন সিগমাইন্ড গ্রুপের পরিচালক আবু আনাস ইবনে সামাদ, ‘সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে বড় ভূমিকা গাড়ির চালকের। তাই আমরা এমন একটি যন্ত্রের কথা চিন্তা করেছি, যা চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করবে। গাড়ির একজন “হেলপার” যেমন সব সময় নানা নির্দেশনা দিয়ে চালককে সহায়তা করে, যন্ত্রটি ঠিক তা-ই করবে।’
সিগমাইন্ড গ্রুপের মাধ্যমেই তাঁরা ‘অ্যাডামস বেসিক’ ও ‘অ্যাডামস প্রো’ নামে যন্ত্রটির দুটি সংস্করণ উদ্ভাবন করেছেন।
কীভাবে কাজ করবে যন্ত্রটি? প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী পরিচালক সিয়াম হোসেন বলেন, ‘গাড়ির সামনের গ্লাসের মাঝবরাবর বা চালকের পাশের ড্যাশবোর্ডে যন্ত্রটি লাগিয়ে রাখা হবে। লেন পরিবর্তন বা ওভারটেকিং করার সময় যন্ত্রটি শব্দ করে চালককে সতর্ক করবে। এ ছাড়া চালকের গতিবিধি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করবে। যা পরবর্তী সময়ে কর্তৃপক্ষ চাইলে জানতে পারবে।’
যন্ত্রটি পরীক্ষামূলক ব্যবহারের সময় তাঁরা একটি ভিডিও বানিয়েছেন। সেই ভিডিও দেখেই জানা গেল, গাড়ির সামনে মানুষ, যান ও অন্যান্য বস্তুকে নানা রঙে আলাদাভাবে চিহ্নিত করছে। যা অ্যাডামস কিটের ছোট পর্দায় দেখা যাচ্ছে। আবার কোনো গাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হলেই সতর্ক করে দিচ্ছে চালককে। ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং করার সময় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকলে সেটাও শব্দ করে জানিয়ে দিচ্ছে। এর মাধ্যমেই চালক সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন তাঁর করণীয় সম্পর্কে।
প্রতিষ্ঠানটির বিপণন কর্মকর্তা সুশান্ত রায় বলেন, এই সুবিধার বইরেও কোনো পথচারী যদি ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা পারাপার হয়, সেটাও অবহিত করবে চালককে। মূলত গাড়ির থেকে ২০ মিটার দূরত্বে কোনো ‘হুমকি’ থাকলে সেটাই জানিয়ে দেবে যন্ত্রটি।
তবে চালকের দক্ষতা বিচার করার জন্য যন্ত্রটি সবচেয়ে কাজে দেবে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা। কারণ, অ্যাডামস কিট সার্বক্ষণিক গাড়ির গতিবিধি ভিডিও করবে। যন্ত্রটির গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) ও অ্যাকসিলারোমিাটার তথ্য সংরক্ষণ করে রাখবে। পরবর্তী সময়ে এই তথ্য দেখে পর্যালোচনা করা যাবে চালক ঠিকভাবে গাড়ি চালিয়েছেন কি না। সিয়াম হোসেন বলেন, একবার লাইসেন্স পাওয়ার পর আমাদের দেশের চালকদের দক্ষতা সম্পর্কে আজ খোঁজ রাখা হয় না। নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান চাইলে এই যন্ত্রের মাধ্যমে চালকের দক্ষতা বিচার করতে পারে।
তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁরা তিন বন্ধু। আবু আনাস ইবনে সামাদ পড়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগে, সিয়াম হোসেন এখনো সেই বিভাগেই পড়ছেন। সুশান্ত রায় পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগে।
তাঁরা যন্ত্রটির ধারণা উপস্থাপন করে গত বছর কানেকটিং স্টার্টআপ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় সেরা পঞ্চাশের একটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ হিসেবে পুরস্কার জিতেছেন। পুরস্কার জেতার পরই তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। সব চড়াই-উতরাই পেরিয়ে গত ২৭ ডিসেম্বর তাঁরা এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এখন কাজ করছেন বিপণনের।
0 comments:
Post a Comment
Hello